সপ্তকল্প

300.00

কালোমানুষসাদা মানুষ

স্বরূপা রায়

পলান্ন প্রকাশনী

Category:

Description

স্পেস থ্রিলার, ডিস্টোপিয়ান সারভাইভাল ড্রামা থ্রিলার, সাইফাই মিস্ট্রি, সাইফাই ফ্যান্টাসি আ্যকশন থ্রিলারের মতো ভিন্ন স্বাদের সাতটি গল্প নিয়ে তৈরি এই সপ্তকল্প। প্রত্যেকটা গল্প নিজগুণে পাঠকের মন জয় করবেই। প্রত্যেকটা গল্পের শেষই বেশ অন্যরকম, যেন শেষ হয়েও হইলো না শেষ। গল্পের লেখনী থেকে শুরু করে বর্ণনা, লেখার গতি বেশ ঝরঝরে। এই বইয়ের প্রচ্ছদ বেশ আকর্ষণীয়, যার মধ্যে গল্পের বিষয়বস্তু এবং এই বইয়ের বিভিন্ন গল্পের বিভিন্ন চরিত্রকেও খুঁজে পাওয়া যায়। এই সাতটি গল্প সম্পর্কে আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া দেওয়ার চেষ্টা করলাম
. দশ ঘন্টা
অসাধারণ এক ডিস্টোপিয়ান সারভাইভাল ড্রামা থ্রিলার। অদূর ভবিষ্যতের অজানা কোনো সময়ে ঘনিয়ে আসা এক মারাত্মক বিপদের হাত থেকে বাঁচার লড়াই। এই গল্পে প্রত্যেক চরিত্রই প্রধান এবং নিজের নিজের দিক থেকে বেশ দৃঢ়। তবে যে চরিত্রের কথা না বললেই নয় সেটা হল ঈশানের মা দুর্গা অর্থাৎ এই গল্পের কথক। যত পড়ছিলাম ততোই অবাক হচ্ছিলাম। একজন দৃঢ় মনের মানুষ আসন্ন মৃত্যু জেনেও মনের জোড় এতটুকু কমায়নি। বরং তার আশেপাশের মানুষগুলোকে সব সময় দৃঢ়তার সাথে আগলে রাখার চেষ্টা করেছে এমন এক চরিত্র গঠনের জন্য লেখককে সত্যিই সাধুবাদ জানাই। এই গল্পের মধ্যে যেমন রয়েছে আশঙ্কা, ভালো মন্দের দ্বন্দ্ব, সাহসিকতা, মানবিকতা বোধ, আবার তেমনই রয়েছে পদে পদে বিপদ। মানুষের জীবনে বিপদ যখন আসে বোধ হয় এভাবেই মারাত্মক রূপ নিয়ে আসে। এই গল্প একবার পড়তে শুরু করলে শেষ না করে থামা মুশকিল

. ৫৩১২২
গল্প শুরু হয়েছেনেক্সট জেন জিনোমকোম্পানির সিনিয়র জেনেটিক্স রিসার্চার অনুরাধা কোরাডের এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এবং অজানা আশঙ্কা দিয়ে। এই গল্পের পরতে পরতে মিশে রয়েছে অজানা ভয় এবং চাপা উত্তেজনা। এসেছে করোনা ভাইরাসের কথা। গল্প যত এগিয়েছে রহস্য আরো ঘনীভূত হয়েছে। গল্প সম্পর্কে বেশি কিছু বলা সম্ভব হয়, নয়তো স্পয়লার দিয়ে ফেলতে পারি। এই গল্প পড়তে পড়তে মনে পড়ে যায় অদ্রীশ বর্ধনের আদিম আতঙ্কের কথা। যদিও এই দুটো গল্পের মধ্যে কোনোরকম সাদৃশ্য বা কোনোরকম যোগাযোগ নেই। তবুও যেটা রয়েছে সেটা হল সেই একই রকম অজানা আতঙ্ক এবং চাপা উত্তেজনা

. দ্রাঘাস
এই গল্পটি স্পেস নিয়ে লেখা আদ্যন্ত এক দারুন সাইফাই থ্রিলার বলা যেতে পারে। রেসকিউ স্পেসসিপক্লিয়ার ভিশনএর সদস্যসহ একটা গ্রুপ মহাকাশে এক অভিযান সম্পূর্ণ করে ফেরার পথে হঠাৎ ডাক পায় এক নতুন রেসকিউ অভিযানের। তাও আবার দ্রাঘাস নামক এক পরিত্যক্ত ছোট গ্রহে, যেখান থেকে সহসা কেউ ফিরে আসে না। সেই নিয়েই গল্পের সূত্রপাত। এই গল্পের স্পেসসিপ সহ নানা ঘটনার খুঁটিনাটি প্রত্যেকটা বর্ণনা পাঠককে শেষ পর্যন্ত এই গল্পের মধ্যে আটকে রাখবে। এই গল্পের প্লটের থেকেও গল্পের বিবরণ বা গল্প বলার ধরণ অনেক বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়েছে আমার। যারা স্পেস থ্রিলার পড়তে ভালোবাসেন তাদের অবশ্যই ভালো লাগবে

. জি৫৫৬৭৮
এই বইয়ের সবথেকে ছোট গল্প বলা যেতে পারে। তবে ছোট হলেও গল্পের অভিনব প্লট এবং অসাধারণ বর্ণনা এই গল্পকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এই গল্পে বার বার এসেছে কম্পিউটার টেকনোলজি, কোডিং, মেমোরি, এনক্রিপশন ইত্যাদি। এই গল্প অনুযায়ী মানুষ নিজেদের রোজকার মেমোরি সেভ করে রাখার জন্য অওরা নামক এক মেমোরি সেভিং পোর্টালে একটি ইউনিক এনক্রিপশন এর মাধ্যমে নিজের মেমোরি সেভ করে রাখে এবং সেই পোর্টালের পেটেন্ট রয়েছে একমাত্র মিশুক সামন্তের কাছে। তাই এই পোর্টালের যে কোনো সমস্যায় মিশুক সামন্তই হয় সবার কাছে শেষ সমাধান। গল্পের সূত্রপাত হয় সদ্য খুন হয়ে যাওয়া প্রখরবাবুর মাথার মেমোরি ফাইলের কোরাপ্ট হয়ে যাওয়া ডেটা নিয়ে, যেটা এনকোড করতে পারলেই ধরা পড়বে আসল খুনি। কিন্তু মিশুক কি পারবে এই কোরাপ্ট হয়ে যাওয়া ডেটা উদ্ধার করতে?? সেই নিয়েই এই গল্প। বেশ অন্য স্বাদের এবং মনগ্রাহী

. মুকুন্দপুরের জঙ্গলে
গল্পের নাম পড়ে কখনোই আন্দাজ করা সম্ভব নয় এই গল্পের প্লট বা গভীরতা। অজপাড়া গাঁ মুকুন্দপুরে সদ্য ট্রান্সফার হয়ে আসা ইন্সপেক্টর সমরেশ মন্ডল হঠাৎ জড়িয়ে পড়ে এক অচেনা অজানা ঘটনার সাথে। হ্যাঁ, এই পর্যন্ত গল্পের প্লট খুবই কমন। তবে এর পর কোথাকার জল যে কতদূর গড়াবে সেটা জানার জন্যই এই গল্প পড়তে হবে। নয়তো এই গল্পের বিষয়বস্তু বা গতিপথ কোনোটাই আন্দাজ করা সম্ভব নয়। এক কথায় অসাধারণ এক গল্প। এই গল্প শেষ হয়েছে এমন এক জায়গায় যেখান থেকে মনে হবে এক নতুন গল্প শুরু হতে পারে। অর্থাৎ শেষ হয়েও হইলো না শেষ। গল্পটা প্রথম শুনেছিলাম অডিও স্টোরিতে। শুনে ভীষণ ভালো লেগেছিল। বই হিসাবে পড়ে ভালোলাগা আরো দ্বিগুন বেড়ে গেল

. ব্ল্যাক অর্ডার ম্যাট্রিক্স
এই গল্পে আবার একবার দেখা মিলেছেজি৫৫৬৭৮গপ্পের অওরা হিউম্যান মেমোরি সেভিং টেকনোলজির ফাউন্ডার মিশুক সামন্তের। তবে এই গল্পের সম্পূর্ণ প্লট এবার তৈরি হয়েছে হায়দ্রাবাদে। এই বইয়ের আগের কিছু গল্পের চরিত্রও ফিরে এসেছে এই গল্পে। তবে কি আবার নতুন কোনো গল্পের সূত্রপাত নাকি পুরোনো কোনো “unsolved” রহস্য মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে? সেটা জানার জন্য গল্পটা পড়তে হবে অবশ্যই। বইটার যত শেষ দিকে এগোচ্ছি, ততোই যেন মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন দানা বাঁধছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত সব প্রশ্নের উত্তর মেলে কিনা!

. সমরেশ স্যাম্পল ‘R – 100’
মুকুন্দপুরের জঙ্গলের সমরেশ ফিরে এসেছে এই গল্পে। এই গল্প যাকে বলে যবনিকা পতন। তাই এই নিয়ে বেশি কিছু বলবো না। শুধু এটুকুই বলবো যে এক মুহূর্তের জন্যও বই ছেড়ে উঠতে পারিনি। এই গল্পে অনেক চরিত্র থাকলেও গল্পের সুন্দর বুনোট এর জন্য কখনও কোথাও ছন্দপতন ঘটেনি বা একঘেয়ে মনে হয়নি। গল্প এগিয়েছে দ্রুত গতিতে আর সেই সাথে প্রতি মুহূর্তে রয়েছে টান টান উত্তেজনা। সব মিলিয়ে চমৎকার এন্ডিং। যদিও ঠিক এন্ডিং কিনা এখনই বলা যাচ্ছে না

এই বইয়ের প্রত্যেকটা গল্প পড়া শেষ করার পর পরই ঠিক প্রত্যেকটা গল্পের পাঠ প্রতিক্রিয়া দেওয়ার চেষ্টা করলাম। অর্থাৎ একটা গল্প শেষ করে সেটা সম্পর্কে লেখার আগে পর্যন্ত জানতাম না পরের গল্পে কি হতে চলেছে। কারণ পুরো বই পড়ে লিখতে গেলে হয়তো অনেক কিছু বলতে মিস করে ফেলতাম। ভিন্ন স্বাদের সাই ফাই গল্পের স্বাদ উপভোগ করতে এই বই অবশ্যই সবাইকে রেকমেন্ড করবো। সবশেষে একটাই কথা বলবো লেখকের নতুন লেখার অপক্ষায় তো থাকলামই, তার সাথে চাঁদের কলঙ্ক, চৌধুরীদের বাড়ি, স্কাইল্যাব এর মত দুর্দান্ত গল্পগুলোকেও বই আকারে প্রকাশ করার অনুরোধ জানালাম

© বৈশাখী ভট্টাচার্য্য

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “সপ্তকল্প”

Your email address will not be published. Required fields are marked *